বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের বাদের তালিকা দীর্ঘ হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে শাসক দলের জরিপের যে কাজ চলছে, সেখানে বিচিত্র ও ভয়াবহ সব তথ্য উঠে এসেছে।
এই কাজ করতে গিয়ে জরিপকারীরা ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এমপিদের অনেকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন। জেনেছেন আওয়ামী লীগের এমপি হয়েও কীভাবে তারা নিজস্ব বলয় তৈরি করে দূরে সরিয়ে রেখেছেন দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের।
নাম প্রকাশ না করে জরিপ কার্যক্রমে যুক্ত একাধিক তথ্য সংগ্রহকারী যুগান্তরকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে বিতর্কিত কিংবা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
অবস্থাটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে-এলাকায় নিজ দলের নেতাকর্মীরাই নির্বাচনে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে এসব এমপি ভরাডুবির শিকার হবেন। তাই এবার তাদের ওপর কোনোভাবেই ভরসা করছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পুরোনো নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত বলয় তৈরির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাচ্ছেন-দেশজুড়েই এমন অভিযোগ পেয়েছেন জরিপ কাজে অংশ নেওয়া টিমগুলোর সদস্যরা।
বর্তমানে কোনো কোনো এমপির অত্যাচারে ঘরছাড়া হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এসব তথ্যযুক্ত প্রতিবেদন জরিপকারীরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন।
সর্বশেষ ২২ জুন অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার আগে আরেকটি অর্থাৎ শেষ জরিপ চালানো হচ্ছে। এই জরিপের ফলাফল মনোনয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বৈঠকে শেখ হাসিনা জানান, ইতোমধ্যে ১৭টির মতো জরিপ চালানো হয়েছে।
গণভবন সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন, তা নিশ্চিত করতে ৩০০ আসনেই বাছাইয়ের কাজ চলছে। সরকারের বিশেষ কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চালানো হয়েছে জরিপ কার্যক্রম।
আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাদের দিয়ে হতে পারে, পৃথকভাবে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের তালিকাও তৈরি করছে দলটি। বিএনপি নির্বাচনে এলে একরকম আবার না এলে আরেক ধরনের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।
এ কারণে শাসক দলটি এখনই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করবে না। তবে পৃথকভাবে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়দের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক। তার মতে, প্রার্থী তালিকার ব্যাপারে চূড়ান্ত মতামত দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মামলা-হামলা, নিজ নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে রাখা, হাইকমান্ডের সতর্কতা উপেক্ষা, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক, মাদক কারবারিদের প্রশ্রয়, নারী কেলেঙ্কারিসহ এমপিদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা জলমহাল, সরকারি খাস পুকুর, বাড়িঘর দখল, টেন্ডারবাজির সঙ্গে যুক্ত।
নির্বাচনি এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ হাটবাজারের নিয়ন্ত্রণ এমপিদের আত্মীয়স্বজনের কবজায় চলে গেছে-এমন অভিযোগও রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ। তাদের আমলনামায় নেতিবাচক তথ্যের সম্ভার এতটাই বেশি যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আগামী দিনে তারা দলীয় পদ-পদবিও হারাতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, দলের বেশকিছু এমপির বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। অনেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েছেন। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। আগামী নির্বাচনে যাতে ভালো মানুষ দলীয় মনোনয়ন পান, সেই চেষ্টা থাকবে। যোগ্যতার বিচারে যারা টিকবেন না, তারা বাদ পড়বেন। যারা ভালো প্রার্থী, তারা মনোনয়ন পাবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক যুগান্তরকে বলেন, দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দলীয় কোনো এমপি যদি কোনো ধরনের অনিয়ম বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে দলীয় প্রধান হিসাবে অবশ্যই তিনি (শেখ হাসিনা) ব্যবস্থা নেবেন।
জানা যায়, একদম শেষ পর্যায়ে নির্বাচনের আগে অর্থাৎ বর্তমানে যে টিম জরিপ করছে, তার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন সরকারের প্রভাবশালী একজন প্রতিমন্ত্রী। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তার অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে এই জরিপ।
এই টিমের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের আমলনামা নিয়ে তারা কাজ করছেন। তারা যে তথ্য পাবেন, তা-ই দলের হাইকমান্ডে পাঠানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবন সূত্র জানিয়েছে, বিতর্কিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং জনবিচ্ছিন্ন এমপিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড দলীয় কার্যালয়ে জমা হওয়া অভিযোগ এবং ইতঃপূর্বে পরিচালিত জরিপ টিমগুলোর প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করছে। অক্টোবর নাগাদ এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত হবে।
সমমনাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে এই প্রতিবেদন থাকবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায়। ইতঃপূর্বে পরিচালিত জরিপ টিমের সংগ্রহ করা তথ্য যুগান্তরের কাছে এসেছে। যারা বর্তমানে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে মাঠের সর্বশেষ চিত্র।
জরিপ টিমগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ-সদস্য দবিরুল ইসলামের নাম। আওয়ামী লীগের জরিপ টিমের কাছে যেসব তথ্য এসেছে, এর মধ্যে রয়েছে-এমপি দবিরুল ইসলামের আত্মীয়স্বজনরা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের জমির জাল দলিল তৈরিতে প্রভাবশালীদের সহযোগিতা করেছেন।
এরপর এই জমি বিক্রি করা হয়েছে এলাকার বাইরের মানুষের কাছে। এ নিয়ে নির্বাচনি এলাকার সংখ্যালঘুরা সংসদ-সদস্য দবিরুল ইসলামের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ।
লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ-সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। তার ছেলে ও এপিএস-এর বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছেন জরিপ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সদস্যরা। এপিএস মিজান সম্প্রতি মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা চালান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ সদর আসনের সংসদ-সদস্য আবদুল ওদুদ দলীয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করে রেখেছেন। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েই বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
এই কবছরে ওদুদ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। বিএনপির কৃষক দল থেকে আসা ওদুদ টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। জরিপে এ ধরনের তথ্য উঠে এসেছে।
নওগাঁ-১ আসনের সংসদ-সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি সরকারের খাদ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার ভাইয়ের দুর্নীতির বিষয়টি এলাকার মানুষের কাছে ওপেন সিক্রেট। মন্ত্রীর নামও দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনায় আলোচনায় রয়েছে। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে বিস্তর অনিয়মের চিত্র আওয়ামী লীগের জরিপ টিমের সদস্যদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার নির্বাচনি এলাকার অধিকাংশ ত্যাগী ও পুরোনো আওয়ামী লীগের নেতারা। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ-তিনি বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ধরে এনে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। তাদের কারণে কোণঠাসা হয়ে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী বর্তমানে রয়েছেন নিষ্ক্রিয়।
এছাড়া ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন অবৈধ উপায়ে অর্জিত এই এমপির সম্পদের অনুসন্ধান করছে। বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের জরিপ টিমের নজরে এসেছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ-সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। তিনি অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসেন আওয়ামী লীগে। দলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। এরপর টানা তৃতীয় মেয়াদের এমপি তিনি। নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে বর্তমানে সারা দেশেই আলোচিত-সমালোচিত এনামুল হক। আওয়ামী লীগের জরিপ টিমের এক সদস্য যুগান্তরকে বলেছেন, এমপি এনামুল হক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা অবাকই হয়েছেন। কারণ, এই এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই।
নাটোর-২ সদর আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের কারণে আওয়ামী লীগের একাধিক পুরোনো ও ত্যাগী নেতা এখন ঘরছাড়া। নিজস্ব বলয় তৈরি করে শিমুল নাটোরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সব ধরনের টেন্ডারে রয়েছে তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ। শিমুল অবৈধ উপায়ে অর্জিত বিপুল অর্থসম্পদ কানাডায় পাচার করেছেন-এমন তথ্যপ্রমাণ আওয়ামী লীগের জরিপ টিমের কাছে এসেছে।
বরগুনা-১ আসনের সংসদ-সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তার বিরুদ্ধে পেশিশক্তি প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগ পেয়েছেন জরিপ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া টিমের সদস্যরা। শম্ভু একেবারেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
বরিশাল-৪ আসনের আলোচিত সংসদ-সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দলের ভেতরে কোন্দল তৈরি, নেতাকর্মীদের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকায় তিনি একপ্রকার কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন।
ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ-সদস্য বজলুল হক হারুন (বিএইএচ হারুন) এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমপি হিসাবে দলের নেতাকর্মীরা তাকে প্রয়োজনে কখনোই পান না-এমন তথ্য পেয়েছে আওয়ামী লীগের জরিপ টিম।
টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও জেলে দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ নেতা নিক্সন হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা হিসাবেও এমপি ছোট মনিরের নাম এসেছে। তথ্য সংগ্রকারীরা এই এমপির বিরুদ্ধে মাদক কারবারিদের সঙ্গে গভীর সখ্যের অভিযোগও পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
নরসিংদী-৩ আসনের এমপি জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপির ওপর ক্ষুব্ধ। জরিপ টিমের সদস্যরা এই হত্যাচেষ্টার সঙ্গে এমপি মোহনের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন, দলীয় কোন্দলের কারণে মোহন অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এমপি হওয়ার পর তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন-এমন অভিযোগ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীর। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। তার সম্পর্কে কয়েক পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করেছে আওয়ামী লীগের জরিপ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি টিম।
সুনামগঞ্জ-২ আসনটি দিরাই ও শাল্লা উপজেলা নিয়ে গঠিত। প্রত্যন্ত এলাকার যাতায়াত দুর্গম হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন অনেকটা বিচ্ছিন্ন বলা চলে। এই বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি আরও প্রকট হয়েছে সংসদ-সদস্য জয়া সেনগুপ্তের নির্বাচনি এলাকায় দীর্ঘ অনুপস্থিতি।
এমপি হওয়ার পর গত সাড়ে চার বছরে তিনি পাঁচবারও এলাকায় যাননি। মানুষের ধারণা, শারীরিক কারণে সংসদ-সদস্য জয়া সেন এলাকায় যেতে পারেন না। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি চক্র ‘এমপির প্রতিনিধি’ পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক ও সামাজিক নানা কাজে প্রভাব বিস্তার করে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে। বিষয়টি জরিপ টিমের সদস্যদের দৃষ্টিতে এসেছে।
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ-সদস্য হাজী সেলিম ও তার সন্তানদের বেপরোয়া আচরণে ক্ষুব্ধ দলের স্থানীয়। নেতাকর্মীরা। তাছাড়া এই এমপির শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। এ কারণে ঢাকায় বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের চলমান কর্মসূচিগুলোয় হাজী সেলিম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের জরিপ টিমের কাছে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে। পুরান ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের এমপি হয়ে এমন নিষ্ক্রিয়তায় দলের হাইকমান্ডে নেতিবাচক বার্তা গেছে। সুত্র: যুগান্তর
পাঠকের মতামত